নিজস্ব প্রতিবেদন: জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। প্রতিটা মানুষের জীবনে কিছু গল্প থাকে। কিছু মানুষের জীবনের গল্প এতটাই নির্মম যে আসলেই হৃদয়কে কাঁদিয়ে ফেলে। অনেক মানুষের জীবন আছে যা সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে। আজ আপনাদের জানাবো নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক নারীর গল্প। মেয়েটির নাম রুমানা। তিনি গত দেড় মাস যাবৎ অটো রিকশা চালাচ্ছে। তার বাবা তাদের রেখে অন্যথায় চলে গেছে। বাবার এই চলে যাওয়া মা মেনে নিতে পারেননি।
তাই সে তার সন্তানদের জন্য তার স্বামীকে খুঁজতে বের হয়। আর ঠিক সেই সময় এক প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা লেগে তার পা ভেঙে যায় এবং মাথায় আঘাত লাগে। এরপরে তাকে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি চিকিৎসা পেয়েছে তবে সম্পূর্ণ চিকিৎসা তিনি পাননি। মেয়েটির বাবা তাদের জমানো অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়। তাই মেয়েটি তার মায়ের চিকিৎসা করতে পারেনি। ফলে তার মা কিছুদিন পর পাগল হয়ে যায়।
এখন তার মা অসুস্থ মনে করলে বাহিরে বের হয়ে যায় আবার যখন সন্তানদের কথা মনে পড়ে তখন নীড়ে ফিরে আসে। অন্যদিকে মেয়েটি সকাল আটটা থেকে রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ছোট ভাই বোনের মুখে খাবার তুলে দেয়। মেয়েটি দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করে। সেই আয় হতে রিক্সা ভাড়া দিয়ে যা জোটে তাই সে ভাই-বোনদের জন্য নিয়ে যায়। অর্থের অভাবে সে ভাই-বোনদের ভালো একটি কাপড়-চোপড় দিতে পারে না এবং পড়াশোনা করাতে পারে না।
মেয়েটি তার এক ফুপুর দেয়া এই রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। যখন জানতে চাওয়া হয় মেয়েটি কোথায় থাকে তখন মেয়েটি বলে সে থাকে ফার্মগেট তেজকুনিপাড়ায়। সেখানে তার ফুপি বাঁশ দিয়ে একটি ঘর বানিয়ে দেয়। তবে সে ঘরের কোন ভাড়া দিতে হয় না। আমরা মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখলাম বাড়িটির অবস্থা বীভৎস্য। চারদিকে চারটা বাঁশ দিয়ে উপরে পাতলা পলিথিন দিয়ে কোন রকম পেচিয়ে ঘর বানিয়ে থাকছে।
মেয়েটিকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় ঝড় বৃষ্টির সময় এই ঘরে তারা কিভাবে থাকে? তখন মেয়েটি বলল যে, ঝড় বৃষ্টির সময় কোন দোকান খোলা থাকবে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে অথবা মন্দিরে গিয়ে বসে থাকে। কারণ যদি ঝড় বৃষ্টির সময় ঘরের উপর গাছ পড়ে যায় তখন তারা নির্ঘাত মারা যাবে। মেয়েটিকে তার মা এবং ভাই বোনদের কে নিয়ে সুরক্ষা স্থানে চলে যায়।
আমরা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করি তুমি কেন রিকশা চালাচ্ছে অন্য কোন কাজ করতে পার না?তখন মেয়েটি বলল- আমি মূর্খ আমাকে কেউ চাকরি দেয় না। বাসা বাড়িতে কাজ করতে গেলে সেখানে কোন সুরক্ষা থাকেনা। তাই আমি বাধ্য হয়ে এ রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই এবং এই রিকশা চালিয়ে আমি আমার সংসার চালাচ্ছি।
মেয়েটিকে যখন আরো জিজ্ঞেস করা হয় তুমি যে রিকশা চালাচ্ছে তোমাকে লোকে কিরকম চোখে দেখে? তখন মেয়েটি খুব সুন্দর করে উত্তর দেয় যে, আমাকে কে কিভাবে দেখলো সেটা আমার দেখে লাভ নেই কারণ আমি খারাপ কাজ করে ইনকাম করছি না আমি আমার নিজের পরিশ্রম দিয়ে ইনকাম করছি। আর মানুষের কথা কানে নিলে আমার সংসার চলবে না।
তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো- তোমার বাবা তোমাদের সংসারে অর্থ দেয় না? তখন সে বলল কিছুদিন আগ পর্যন্ত ১০০০ টাকা করে দিত কিন্তু চলে যাওয়ার পর এখন আর কোনো খোঁজখবর নেই। মেয়েটি এটাও জানে না তার বাবা এখন কোথায়? এবং এটাও জানা যায় যে তার বাবা থাকলে তার ভাই-বোন পড়াশোনা করত।
মেয়েটিকে বলা হলো তোমাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে তুমি কি কে সেই সাহায্য নেবে? অর্থ দিয়ে বা তোমাকে কোনো চাকরি দিয়ে যদি কেউ সাহায্য দেয় তাহলে তুমি সেই সাহায্য নেবে? তখন মেয়েটি খুব সুন্দর ভাবে উত্তর দিলো যে হ্যাঁ অবশ্যই নিব। তবে চাকরির ক্ষেত্রে যদি আমার সুরক্ষা থাকে তাহলে আমি অবশ্যই নিব। আপনারা মেয়েটির ভিডিওটি দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যেতে পারেন।