নিজস্ব প্রতিবেদন: ইঁদুর একটি চতুর ও নীরব ধ্বংসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইঁদুর প্রাণীটি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক। এরা যে কোনো খাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারে। যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। অল্প বয়সে বাচ্চা দিতে পারে। ১৭০০টি ইঁদুরজাতীয় প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে ২২টির অধিক ক্ষতিকারক ইঁদুরজাতীয় প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ইঁদুর আমাদের উৎপাদিত ফসলকে নষ্ট করছে। ক্রমবর্ধমান হারে খাদ্যের প্রয়োজনে দেশে বর্তমানে এক ফসলের পরিবর্তে বহুবিধ ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এর ফলে ইঁদুর মাঠেই খাদ্য পাচ্ছে। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, আলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ শতাংশ এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি করে।
ইরির 2021 সালের এক গবেষণা মতে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে।
ইঁদুর শুধু আমাদের খাদ্যশস্য খেয়ে নষ্ট করে না বরং তা কেটে কুটে অনেক ধ্বংস করে। এদের মলমূত্র, লোম খাদ্য দ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ ও ক্রিমিরোগসহ ৬০ ধরনের রোগ ছড়ায়।
প্লেগ নামক মারাত্মক রোগের বাহক হচ্ছে ইঁদুর। ইঁদুর মাঠের ও ঘরের শস্য নষ্ট ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন তার ও কম্পিউটার যন্ত্র কেটে নষ্ট করে। এছাড়া বড় সড়ক বাঁধ, রেললাইনে গর্ত করে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে। বন্যার পানি ঢুকে তা নষ্ট হয়। এ জন্য এর ক্ষতির পরিমাণ পরিসংখ্যানগতভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কাজেই ফসল ও সম্পদের ক্ষতি রোধ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দূষণমুক্ত পরিবেশের স্বার্থে ইঁদুর সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষেত-খামার, বসতবাড়িসহ সর্বত্র ইঁদুরমুক্ত করার লক্ষ্যে ইঁদুর নিধনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
ইঁদুরের উপস্থিতির লক্ষণ:
কর্তনের শব্দ, নখের দ্বারা আঁচড়ানো শব্দ, কোনো কিছু বেয়ে ওঠার অথবা নামার শব্দ, ক্ষণস্থায়ী চিচি শব্দ, চলাচলের রাস্তায় মল, নোংরা দাগ, পায়ের ছাপ, ইঁদুর যাতায়াত পথের সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি দ্বারা ইঁদুরের উপস্থিতি বোঝা যায়। ইঁদুরের বাসা এবং তার আশপাশে ছড়ানো ছিটানো খাদ্যাংশ দেখে ইঁদুরের উপস্থিতি জানা যায়। ইঁদুরের গন্ধ এবং পোষা প্রাণির লাফঝাপ বা অদ্ভুত আচরণ বা উত্তেজনা ইঁদুরের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
ইঁদুরের স্বভাবই হলো কাটাকুটি করা। কাঠের গুঁড়া, দরজা, জানালা, ফ্রেম, গুদামের জিনিসে ক্ষতির চিহ্ন দেখে এর আক্রমণের লক্ষণ বুঝা যায়। এছাড়া আক্রান্ত আনারস, নারিকেল, আখ, ঘর বা গুদামে রক্ষিত ধান, চাল, গম রাখার বস্তা কাটা দেখে, ইঁদুরের খাওয়া ধানের তুষ দেখে এদের উপস্থিতি বোঝা যায়। ঘরে বা তার পাশে ইঁদুরের নতুন মাটি অথবা গর্ত, ফসলের মাঠে, আইলে ও জমিতে ছোট রাস্তা, বাঁধ, পুল প্রভৃতির পাশে গর্ত দেখে ইঁদুরের উপস্থিতি ও সংখ্যা নির্ণয় করা যায়।
ইঁদুর দমনের স্থান, সময় ও ফসলের স্তর:
১. ধানের জন্য বীজতলায় এবং ধানের কুশি স্তর থেকে ধানের থোড় হওয়ার আগে পর্যন্ত। এ সময় ইঁদুরের সংখ্যা কম থাকে এবং মাঠে খাদ্যও কম থাকে। আমন ফসলে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত;
২. গমের জন্য থোড় হওয়ার আগে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে;
৩. সবজি, বাদাম, আলু ফসলের ক্ষেত্রে ফসল লাগানোর সময় এবং ফসল ধরার আগে দমন ব্যবস্থাপনা নিতে হবে;
৪. আখের ক্ষেত্রে চারা রোপণের আগে মাটি ও আইলে দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে;
ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা:
ইঁদুর একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রাণী। একটি মাত্র পদ্ধতি দ্বারা ইঁদুর দমন করা বাস্তবে সম্ভব নয়। ইঁদুর দমন পদ্ধতি সঠিক স্থানে, সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
ইঁদুর মারার কলাকৌশল
ইঁদুর সাধারণত দুইভাবে দমন করা যায়।
১. অরাসায়নিক দমন ব্যবস্থা ও ২. রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা।
অরাসায়নিক দমন ব্যবস্থা:
১. ঘরবাড়ি ও ক্ষেতের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা;
২. গুদামঘর পরিষ্কার রাখা এবং গুদামের দরজার ফাঁক দিয়ে যেন ইঁদুর ঢুকতে না পারে তেমন ব্যবস্থা করা। এছাড়া গুদামঘরের ছিদ্র বা ফাটল সিমেন্ট দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দেয়া;
৩. ধান, গম ইত্যাদির গোলা বা ডোল সরাসরি মাটিতে না রেখে মাচার ওপর ঘরে রাখা এবং মাচার প্রতিটি পিলার মসৃণ টিন দিয়ে এমনভাবে জড়িয়ে দেয়া যেন ইঁদুর তা বেয়ে উঠতে না পারে। গুদামের শস্য টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা;
আজ আমরা আপনাদের কে শিখাবো কিভাবে ইদুরকে ফাদে ফেলতে হয়।বিষ ছাড়াই ইদুর মারার টেকনিক নিচে ভিডিওতে রইলো বিস্তারিত:
বিস্তারিত ভিডিওতে দেখুনঃ