Breaking News

চীনের গাফিলতিতে করো’না ছড়িয়েছে, যার কারনে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না চীনের প্রেসিডেন্ট

২১ মাস ধরে দেশের বাইরে যান না চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। সরাসরি অংশ নেননি জি-২০ সম্মেলনে। এমনকি অতি গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলনেও (কপ-২৬) দেখা মেলেনি তাঁর। চলতি বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে সি চিন পিংয়ের। তবে সেটিও কবে নাগাদ হবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

কেন চীনা প্রেসিডেন্ট নিজেকে দেশের সীমানার মধ্যে গুটিয়ে রেখেছেন? মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে সে কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে, মহামারি করোনাভাইরাস একটি কারণ। তবে বিশ্লেষকেরা আরও গভীরে গিয়ে বিষয়টি দেখছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, চীনের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি বদলে এমনটা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে চীন। চীনের গাফিলতিতে দেশটি থেকে করোনা ছড়িয়েছে—এমন অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। এ ছাড়া তিব্বত ও জিনজিয়াং থেকে শুরু করে হংকং ও তাইওয়ান ইস্যু—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে। চীনের ভাবমূর্তি যখন সংকটে, তখন সি চিন পিংয়ের এমন বিদেশবিমুখতা বাকি দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দিন দিন খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সি চিন পিং হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন না বলে মনে করেন বার্লিনভিত্তিক মেরক্যাটোর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক হেলেনা লেগার্দা। তিনি বলেন, সি বিদেশ সফর এড়িয়ে চলার কারণে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ বাধা পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে চুক্তি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এবং উত্তেজনা কমাতে সশরীরে বৈঠক অনেক সময় জরুরি হয়ে পড়ে।

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ বলছে, চীন অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা সি চিন পিংয়ের স্বাস্থ্য ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কৌশল রক্ষায় ব্যস্ত। এর মধ্যেই আগামী বছরে কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন ডাকা হয়েছে। সেখানে সি চিন পিংয়ের ক্ষমতার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এই মুহূর্তে চীনের কাছে বৈশ্বিক কূটনীতি অতটাও গুরুত্ব পাচ্ছে না।

করোনা মহামারির আগে চীনের প্রেসিডেন্টের শেষ সফর ছিল মিয়ানমারে—২০২০ সালের জানুয়ারিতে। এর কদিন বাদেই দেশটির উহান শহরে লকডাউন ঘোষণা করেন তিনি। এর পর থেকে আর দেশের বাইরে যাননি সি চিন পিং। চীনের ভেতর থেকেই বৈঠক করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানসহ কম্বোডিয়া ও মঙ্গোলিয়ার নেতাদের সঙ্গে। সর্বশেষ সরাসরি বৈঠক করেছেন গত বছরের মার্চে। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি।

তবে চীনা নেতারা এর আগে কিন্তু ভিন্ন পথে হেঁটে এসেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁরা বিদেশ সফরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোয় চীনের প্রেসিডেন্টদের ভ্রমণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সি চিন পিং যখন প্রথম প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেন, তখনো বিষয়টি এমনই ছিল। ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক নেইল থমাসের গবেষণা বলছে, করোনা হানা দেওয়ার আগে বিদেশ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন সি চিন পিং। মহামারির আগে সি বছরে গড়ে ১৪টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ৩৪ দিন কাটিয়েছেন বিদেশে। একই সময়সীমায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গড়ে ২৫ দিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৩ দিন বিদেশে কাটিয়েছেন।

তবে সি চিন পিংয়ের বিদেশ সফর থামলেও চীন সরকারের কূটনীতি থেমে থাকেনি। ক্ষমতার পালাবদল হয়ে আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন ও রাশিয়া। এ ছাড়া ইউরোপের একাধিক নেতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়েছেন সি। তাঁদের মধ্যে আছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ভিডিও কনফারেন্সের মধ্য দিয়েই তিনি চীনের নতুন আত্মবিশ্বাসী ভাবমূর্তিকে তুলে ধরতে চাইছেন বলে মত বিশ্লেষকদের।

এদিকে জি-২০ বা কপ-২৬ সম্মেলন এড়িয়ে একই সময়ে চীনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক। চলতি মাসের ৯ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত বেইজিংয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সি চিন পিংকে পরবর্তী মেয়াদে ক্ষমতায় আনতে আলোচনা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সি চিন পিংয়ের জলবায়ু সম্মেলনে অনুপস্থিতির পর সম্মেলনের সফলতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা। হেলেনা লেগার্দা বলেন, বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বেইজিংয়ের কাছে জলবায়ু ইস্যু কি আদৌ গুরুত্ব পাচ্ছে না?

Check Also

আমাদের দেশেই বাজারে বি’ক্রি হচ্ছে “বর”! টা’কা দিয়ে বাড়িতে ও’ঠা’চ্ছে’ন বউরা

আজকাল আজব কত কিছুই ঘটছে এই দুনিয়ায়। সেরকমই একটা ঘটনা যা ভারতের মত জায়গায় শুনতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *