Breaking News

রান্নায় কোন তেল ব্যবহার করবেন? জেনে নিন সব তেলের গুণাগুণ

সয়াবিন ও সরিষা তেলের সঙ্গে আমাদের নিত্যদিনের পরিচয়। ইদানীং অন্যান্য ভোজ্য তেলের কদরও বাড়ছে। এগুলোর পুষ্টিগুণও ভিন্ন। কোন তেলে কী পুষ্টি—জেনে ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এ বিষয়ে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. সুমাইয়া মামুন।

খাবার তৈরিতে প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহার করি। বাজারে নানা ব্র্যান্ড, বিভিন্ন নামের তেল ও চোখ-ধাঁধানো বিজ্ঞাপন আমাদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। কোনটা রেখে কোনটা ব্যবহার করব—এ নিয়ে দোটানায় ভোগেন অনেকে। তাই জেনে রাখা ভালো, তেল কেনার সময় কোন বিষয়গুলো লক্ষ করতে হবে। সব ধরনের তেলেই চর্বি বা ফ্যাট থাকে। ফ্যাট মানেই যে তা খারাপ, ব্যাপারটি এমন নয়। তেলে সাধারণত স্যাচুরেটেড, মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যেগুলো আমাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রার তারতম্য ঘটায়।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা আমাদের হূদরোগের ঝুঁকিতে ফেলে। যেসব তেলে এই ফ্যাটের মাত্রা বেশি সেগুলো পরিহার করা ভালো। আবার পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা উপকারী। যে তেলে পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি, সেগুলোই ব্যবহার নিরাপদ। সব ধরনের তেলের বোতলের লেবেলে পুষ্টি উপাদানের তালিকা থাকে। কেনার সময় এই তালিকায় থাকা ফ্যাটের মাত্রা কত সেটা লক্ষ করুন। যে তেলে মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি সেগুলোই বাছাই করুন। মনে রাখবেন, যে তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৩৫ শতাংশের নিচে এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৫০ শতাংশের ওপরে সেই তেল দৈনিক ব্যবহারের জন্য ভালো।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তেলের স্মোক পয়েন্ট। অর্থাত্ যে তাপমাত্রায় তেল পুড়ে ফ্যাটগুলো ভেঙে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি করে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই রান্নার পদ্ধতির ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন—অলিভ অয়েলে পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকলেও এর স্মোক পয়েন্ট অনেক কম হওয়ায় ভাজাপোড়ার জন্য এই তেল ঠিক নয়। তবে সালাদ ড্রেসিং এবং অল্প আঁচের রান্নার জন্য ভালো। আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে খাবার রান্না করা হয় তাতে বেশি স্মোক পয়েন্ট (১৭৭ থেকে ২৩২ ডিগ্রি) সম্পন্ন তেল কেনাই উপযুক্ত। চলুন দেখে নিই, বর্তমান বাজারে প্রচলিত তেলের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা।

সয়াবিন তেল: সয়াবিন তেল আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৩৫ শতাংশের নিচে এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৫০ শতাংশের ওপরে। এর স্মোক পয়েন্টও অনেক বেশি (২৫৬ ডিগ্রি)। বেশি তাপমাত্রার রান্না, ভাজাপোড়া ইত্যাদি খাবার তৈরির জন্য সয়াবিন তেল বেশি উপযোগী। এ ছাড়া সয়াবিন তেলের দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই। এ জন্য প্রতিদিনের রান্নায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন তেল ডায়াবেটিস, স্থূলতা, স্নায়ুজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

সরিষা তেল: সরিষার তেলে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ। ফলে আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে। একসময় গ্রাম বাংলার একমাত্র ভোজ্যতেল ছিল সরিষার তেল। এর ওষুধি গুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সরিষা তেলের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে ইদানিং সয়াবিনের ব্যাপক প্রচলনের ফলে সরিষা তেলের ব্যবহার দিন দিন কমে আসছে। শুধু খাওয়ার জন্যই নয় চুল ও ত্বকের যত্নেও সরিষা তেল উপকারী।

সানফ্লাওয়ার তেল: এই তেল প্রচুর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ। এর স্মোক পয়েন্ট অনেক বেশি (২২৭ ডিগ্রি)। দৈনিক যেকোনো রান্নার জন্য উপযোগী। সানফ্লাওয়ার তেলে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ আছে, যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ও হূদরোগের ঝুঁকি কমায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ভাজাপোড়ার ক্ষেত্রে এই তেল এলডিহাইড নামের ক্ষতিকর উপাদান তৈরি করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

রাইসব্রান তেল: রাইসব্রান তেল মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ। এর স্মোক পয়েন্ট (২৫৪ ডিগ্রি) বেশি হওয়ায় যেকোনো খাবার রান্নায় ব্যবহার উপযোগী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই তেল রক্তের কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমায়। এ ছাড়া টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ব্লাড সুগারের মাত্রাও কমায়। তবে যাঁদের ব্লাড প্রেসার কম, তাঁদের চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে এই তেল ব্যবহার করা উচিত।

জলপাই তেল: আমাদের দেশে জলপাই তেলের প্রচলন খুব বেশি না হলেও একেবারে কমও নয়। এই তেলের দাম অন্যান্য তেলের তুলনায় বেশি হওয়ায় শুধু ধনীদের রান্নাঘরেই এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়। জলপাই তেলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ, হাড় মজবুত করা, ওজন কমানো, মনকে প্রফুল্ল রাখা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শুধু খাবারেই নয়, আমাদের ত্বকের যত্নেও জলপাই তেল দারুণ উপকারী। তাই শীতে ত্বক ও চুলের যত্নে নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহার করতে পারেন। শুষ্ক, স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত—সব ধরনের ত্বকের জন্যই এই তেল সমান কার্যকর।

আপনি খাবারে যে তেলই ব্যবহার করুন না কেন, এর দোষ-গুণ নির্ভর করে কিভাবে এবং কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন তার ওপর। তাই তেল কেনার আগে অবশ্যই পুষ্টিমান দেখে কিনুন। একটি কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন, তেল যতই ভালো হোক, খাবারে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং মাত্রাতিরিক্ত ভাজাপোড়া সবার জন্যই ক্ষতিকর।

Check Also

হেড’ফো’নে গান শো’নেন! যুব’কের পরি’ণতি জা’নার পরে আর সেই সা’হ’স করবেন না

সম্প্রতি আমেরিকার এক যুবককে প্রতিদিন ইয়া’রফোন এবং হেড’ফোনে গান শোনার যে মূ’ল্য দিতে হয়েছে, তা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *