ছেলেবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আমার বিয়ের। বিয়ে নিয়ে অনেক মেয়েদেরই যেমন গোপন স্বপ্ন থাকে, তেমন আমারও ছিল। স্বামী যে শুধু আমাকে পাগলের মত ভালবাসবে সেটা আর কে না চায়। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ যে আমার জন্য এইরকম ভয়ঙ্কর কিছু প্ল্যান করে রেখেছে সেটা আমি জানতাম না।
কলেজে পড়ার সময় দেখতাম একজন ছেলে ও মেয়ে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ একে অপরের কাধে মাথা রাখছে। আমারও ইচ্ছে করত এইরকম কিছু করতে, কিন্তু পারতাম না। আমাদের পরিবার অনেক বড়। চার ভাই বোন আর বাপ মা।
বাকিদের সবাই বিয়ে করে নিয়েছিল, বেচে ছিলাম আমি একা। অনেক সময় আমি একাকীত্বে ভুগতাম। ভাবতাম তাহলে কি আমার জন্য বাড়ির কেউই ভাবে না ? আবার অনেক সময় ভাবতাম আমি মোটা বলে হয়ত আমাকে কেউ পছন্দ করেনা। এটা ভেবে হয়তো বাড়ির লোক এগোচ্ছেনা আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে।
আমার প্রেম করতে ইচ্ছা হতো, কিন্তু মোটা অবস্থার কথা চিন্তা করে আমি নিজেই পিছিয়ে আসতাম। আর শুধু তাই নয় বাড়িও ছিল যথেষ্ট কড়া। তাই আমি প্রেম করলে একদমই তারা সহ্য করতে পারবে না। তাই প্রেমের দিকে না গিয়ে আমি বাড়ির লোকের সিদ্ধান্তের উপরেই সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলাম।
অবশেষে আমার যখন ৩৫ তখন এক বছর চল্লিশের ছেলে আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়। ততদিনে অবশ্য বাড়ি থেকে আরো কয়েকজনকে দেখা হয়েছিল। আমার বাড়ির লোকের একেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়। আমি নিজের মনের মধ্যে থাকা দুশ্চিন্তার কথাগুলো এই নতুন মানুষকে বলা শুরু করলাম। কিন্তু আমার মনে হল সে কিছু শুনতে আগ্রহী নয়।
বেশীর ভাগ সময়েই সে নিজের চোখ মাটির দিকে রেখে আমার সাথে কথা বলতো। আমি ভাবতাম সে লাজুক। বিয়ের পর প্রথম রাতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমি দুধের গ্লাস হাতে ঘরে ঢুকে দেখি সে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তার এই ব্যবহার আমাকে বিস্মিত করেছিল। দুঃখিতও।
বিয়ের পর কেটে গেল আরও অনেক রাত, রোজ রাতেই একই ব্যাপার ঘটতে দেখে আমি শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করলাম লজ্জার মাথা খেয়ে। শ্বাশুড়ি জানালেন ও মেয়েদের ব্যাপারে লাজুক। আমি নিজেও দু একবার ওকে নিজের দিকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোন লাভই হলনা।
পরে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে আমি জানতে পারি সে আসলে নপুংশক। বিয়ের আগেই ডাক্তারি পরীক্ষায় তা ধরা পড়েছিল, কিন্তু বাড়ির কেউ তা মানতে রাজি ছিল না বলে তাকে জোর করে আমার সাথে বিয়ে দেয়।স্বামীকে সরাসরি একথা বলতে তিনি রেগে যান। আমার গায়ে হাতও তোলেন।
আমার সামনে দুটো রাস্তা খোলা ছিল। সারাজীবন সহ্য করা অথবা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। আমি দ্বিতীয়টাই বেছে নি। স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার পর নিজের বাবা মা আমাকে ফিরিয়ে নেয়নি। আমিও লড়াই ছাড়িনি। বন্ধুদের সাহায্যে এখন একটা থাকার জায়গা পেয়েছি, সেখানেই দিন কাটছে আমার। চেষ্টা করি ছেলেদের থেকে যত দূরে থাকা যায়। মানসিকভাবে আর কারোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা মনে হয়নি আমার।