বিহারের কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা অনিল বোসাকের বাবা হকারি করে কাপড় বিক্রি করতেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এমনভাবেই দিনরাত এক করে সংসার দেখাশোনা করতেন তিনি। তখন অনিল গ্রামের একটি সরকারি স্কুলে পড়তো।
এদিকে একদিন ইউ.পি.এস.সি-র রেজাল্ট এল এবং তার এক বন্ধুর ভাই তাতে সিলেক্ট হয়। সেই সময় অনিল আই.এ.এস এবং ইউ.পি.এস.সি-র নাম পর্যন্ত শোনেননি। কিন্তু যখন তিনি শহরে পা রাখেন, তখন তিনি এইগুলি সম্বন্ধে জানতে পারল।
অনিলকে পড়াতেন এমন একজন শিক্ষক, তাকে ইউ.পি.এস.সি সম্পর্কে বলেছিলেন এবং একই সাথে সাফল্য অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এরপর অনিলের মন ইউ.পি.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে আই.এ.এস হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
কিন্তু তার পথ ছিল কঠিন। চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান অনিলের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন ছিলনা যে, তিনি একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারতেন বা কোচিং এর সুবিধা নিতে পারতেন। কাজেই যা কিছু করার ছিল, তাকে নিজের সামর্থ্য এবং নিজের মতো করেই করতে হয়েছে।
দশম শ্রেণীর পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনিল আই.আই.টি-তে ভর্তির জন্য কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন। তার কঠোর পরিশ্রম সার্থক হয়েছে এবং সাফল্য পেয়েছে। 2014 সালে তিনি আই.আই.টি দিল্লিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন এবং 2016 সাল থেকে তিনি ইউ.পি.এস.সি-র জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।
2018 সালে ইঞ্জিনিয়ারিং করার পর তার কাছে চাকরির অফার ছিল, যদিও তিনি ক্যাম্পাস প্লেসমেন্টে বসেননি। বাড়ির আর্থিক অবস্থা বারবার বাধ্য করছিলো, কিন্তু তিনি তার স্বপ্ন থেকে পিছুপা হননি এবং সম্পূর্ণ মনোযোগ ইউ.পি.এস.সি-র প্রস্তুতিতে দিয়েছিলেন।
অনিল প্রথমবার সাফল্য পাননি। দ্বিতীয়বার কঠোর পরিশ্রমের প্রতিফলন ঘটে এবং তিনি সাফল্য পান। ইউ.পি.এস.সি-তে 616 তম স্থান পেয়ে পাস করেন। পরিবার ও গ্রাম তার এই সাফল্যের জন্য উদযাপন করলেও, তিনি এই সাফল্যে সন্তুষ্ট ছিলেন না।
তার মনে একটা স্বপ্ন ছিল আই.এ.এস অফিসার হওয়ার। আর্থিক অনটনের কারণে চাকরিতে যোগদান করেন। আয়কর কমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার স্বপ্ন তাকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিচ্ছিল না। তাই তিনি ছুটি নিয়ে আবার ইউ.পি.এস.সি-র জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এবার অবশেষে নিজের পদ পেয়েছেন। 45 তম র্যাংকের সাথে তার আই.এ.এস হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।