কথায় আছে, বুড়ো বয়সে যাতে সঙ্গিহীন না হতে হয়, তার জন্যেই পৃথিবীর নিয়ম মত পুরুষ নারী বৈবাহিক সম্পর্কে জরায়। কিন্তু যারা বুড়ো বয়সে সঙ্গী হারায় তাদের জন্য কি অন্যরকম কিছু হতে পারে না! জীবনের গতিপথ যে সবসময় একই ছন্দে চলবে এমনটাও কিন্তু কোনো শাস্ত্রে বলা নেই। এবার কাজের কথায় আসা যাক। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, এ কোনও অবৈধ সম্পর্ক নয়। ছেলে, পরিবারের সম্মতিতেই পছন্দের মানুষের সঙ্গে বিয়ে।
তাও আবার বর কনের বয়স একেবারে অর্ধ্ব শতাব্দীর একেবারে কিনারায় গিয়ে ঠেকেছে। কে জানে জীবনের আগের বাঁকেই হয়ত অপেক্ষা করছে আপনার বেঁচে থাকার রসদ। কিন্তু এইবার সেই রসদের খোঁজ যদি নিজের ছেলে নিয়ে আসে কেমন হয় সেটা!
কি অবাক হচ্ছেন তাই তো, এরকমই একটা ঘটনার অঙ্গীকার হলেন পাল পরিবার। প্রায় বছর দশেক হয়ে গিয়েছে তরুণ কান্তি পাল তার স্ত্রী কে হারিয়েছেন। তখন থেকেই একলা থাকাটা তাঁর অভ্যাস হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন সে থাকবে একলা? তাঁর ছেলের দাবি মা চলে গিয়েছেন অনেক দিন আগে, সে আর ফিরবেন না। তাহলে কোন অপরাধের মাশুল গুনবে বাবা?
এমনটা আর হতে দেওয়া যায়না। তাই নিজে দাঁড়িয়ে থেকেই বাবার মাথায় আবার বিয়ের মুকুট তুলে দিল ছেলে। একেবারে ধুমধাম করে পালন করলেন বাবার বিয়ের অনুষ্ঠান। তাও আবার মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার দরবারে সেই ভিডিও একেবারে ভাইরাল।
ছেলে সায়ন পাল। তাঁর বাবার নাম তরুণ কান্তি পাল। বয়স ৬৬। আর তাঁর নতুন মায়ের নাম স্বপ্না রায়। বয়স ৬৩। গত ২৫ নভেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। ১০ বছর আগেই প্রথম ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছেন তরুণ কান্তি পাল। তারপর থেকেই সে একা। ছেলেকেও কাজের সূত্রে থাকতে হয় কানাডায়। একদমই বাবাকে সময় দেওয়ার সুযোগ হয় না তাঁর। ছেলে সায়ন জানিয়েছেন, ‘বছর দুয়েক আগে অবসর নিয়েছেন বাবা। এরপর ভট্টনগরের রামকৃষ্ণ মঠে রোজ নিয়ম করে যেতেন। সারদা মায়ের জন্ম তিথিতে দু-বছর আগে স্বপ্না রায়ের সঙ্গে দেখা হয় বাবার।
এরপর, মাঝে মাঝে দেখা হত। তারপর ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ, তারপর কথা বলা শুরু। এরপর একে অপরের সম্পর্ক গাঢ় হয়। স্বপ্না রায় ভালোবাসার কথা জানায় তরুণ কান্তিকে। সেই ভালোবাসায় সহমত হয় তরুণবাবু। এরপর তারা একসঙ্গে থাকতে সময় কাটাতে চায়। এরপর ছেলের মত নেয় তাঁরা। ছেলের সম্মতিতেই বিয়ে হয় তাদের।
উল্লেখ্য, দুই পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে পূর্ব পরিচিত। ভট্টনগরের গ্রামে থাকত তাঁরা। কিন্তু নবদম্পতির আগে কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। তরুণ কান্তি পাল, জানিয়েছেন, ‘জীবন একটি দীর্ঘ যাত্রা। সেই যাত্রায় কাউকে সঙ্গে নিতে লাগে।
দুর্ভাগ্যক্রমে যদি সঙ্গী চলে যায় ছেড়ে। তবে তাদের অসমাপ্ত যাত্রায় অন্য কাউকে অংশীদার হিসাবে বেছে নিতে হয়।’ অন্যদিকে ছেলে সায়ন পাল বাবা ও নতুন মায়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পাশাপাশি টুইট করে জানিয়েছেন, ‘আমি খুব খুশি যে বাবা তাঁর ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন’।