কথায় বলে, ইচ্ছেশক্তি ও মানসিক দৃঢ়তার জোরেই বহু অসম্ভবকেই সম্ভব করে ফেলা যায়৷ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যায় বহু বাধা-বিপত্তি। আর পরবর্তীতে যা চাওয়া যায় তা-ই যেন চলে আসে হাতের মুঠোয়। ঠিক তেমনই একজন হলেন, বি রবি পিল্লাই।
প্রবাসী এই ভারতীয় ব্যবসায়ী বর্তমানে বর্তমানে দুবাই-ভিত্তিক আরপি গ্রুপের প্রধান। কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েও কঠিন সংগ্রাম এবং নিষ্ঠার জোরে আজ তিনি ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকার মালিক। তাঁর কোম্পানিগুলিতে প্রায় ৭০,০০০ কর্মচারী কাজ করেন। ফোর্বস পত্রিকার মতে বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছে পিল্লাইয়ের নাম। তিনি দেশের মধ্যে কেরালার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিও বটে।
তবে শুরুটা এত সহজ ছিল না। ১৯৫৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর কেরালার চাভারা গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম রবির। চাষবাস করেই চলত তাঁদের সংসার। অর্থাভাবের কারণে ছেলেবেলা থেকে বহু সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে রবিকে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করে নিজের পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দিতে ভোলেননি।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে স্থানীয় এক কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর কোচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন রবি। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন। সেই সময়ে স্থানীয় এক মহাজনের থেকে এক লক্ষ টাকা ধার নিয়ে নিজের চিট-ফান্ড কোম্পানি শুরু করেন রবি। এরপর ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জন হলে প্রথমেই মহাজনের ঋণ শোধ করে এরপর লাভের টাকা জমিয়ে হোটেল তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।
১৯৭৮ সালে ভারত ছেড়ে সৌদি আরবে চলে যান রবি। সেখানে ১৫০ জন কর্মচারী নিয়ে নাসের এস আল হাজরি কর্পোরেশন (এনএসএইচ) নামে নিজস্ব নির্মাণ সংস্থা শুরু করেন। তবে এরই মাঝে বহু উত্থান-পতন দেখেছেন রবি। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে দীর্ঘদিন ব্যবসাও বন্ধ রাখতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। আরও কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এরপর একটি ফরাসি বিমান সংস্থার কাছ থেকে বড় চুক্তি পাওয়ার পর তাঁর ব্যবসা বহুগুণ বাড়ে। বর্তমানে একাধিক বিলাসবহুল হোটেলের মালিক রবি পিল্লাই।
বিত্তশালি এই ব্যবসায়ী এর মধ্যে কিনে ফেলেছেন একটি এয়ারবাস এইচ-১৪৫ হেলিকপ্টারও। যার দাম ১০০ কোটি টাকা। হেলিকপ্টারটি এশিয়ার প্রথম পাঁচ-ব্লেডের এইচ-১৪৫ হেলিকপ্টার। সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত এই অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারে দু`জন চালক সহ সর্বোচ্চ সাতজন যাত্রী চড়তে পারেন। হেলিকপ্টারটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতা থেকেও উড়ে যেতে এবং অবতরণ করতে সক্ষম। উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই ধরনের হেলিকপ্টারের তিনিই প্রথম ভারতীয় মালিক! এর আগে কোনও ভারতীয়র কাছে এই হেলিকপ্টার নেই।
হেলিকপ্টারটিকে এয়ারবাস কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোভালামে পৌঁছে দিয়েছিল। সেখান থেকেই রবি পিল্লাইকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি এক বিলাসবহুল হোটেলের উদ্দেশে উড়ে যায়। জানা গিয়েছে, কোঝিকোড়, কোল্লাম এবং তিরুঅনন্তপুরমে আরপি গ্রুপের নিজস্ব হেলিপ্যাড রয়েছে। আরপি গ্রুপের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, হোটেলগুলিতে থাকতে-আসা বিশেষ অতিথিদের এই হেলিকপ্টারে চড়িয়ে রাজ্যের পর্যটনস্থলগুলিতে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে।
তবে এরূপ বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও খুব সাধারণভাবেই জীবন যাপন করতে ভালবাসেন রবি পিল্লাই। প্রচুর দান-ধ্যানও করেন। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে তাঁর। তাঁর কৃতিত্বের জন্য রবিকে ২০১০ সালে ‘পদ্মশ্রী’ এবং ২০০৮ সালে ‘প্রবাসী ভারতীয় সম্মান’ দিয়ে ভূষিত করে ভারত সরকার। নিউ ইয়র্কের এক্সেলসিয়র কলেজ থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রিও লাভ করেন। কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও আজ এভাবেই রবি হয়ে উঠেছেন যুব সমাজের অনুপ্রেরণা।