মাছ রান্না করার সময় সাধারণত আমরা প্রথমে মাছটাকে ভেজে নিই। এই মাছ ভাজতে গিয়েই হয় বিপত্তি। কড়াইয়ে মাছ ভাজার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই মাছ লেগে যায়। এমনকি ভাজার সময় উল্টোতে গেলে মাছ ভেঙে যায় বা মাছের চামড়াটা আলাদা হয়ে যায়। মোট কথা বাজার থেকে সুন্দর করে কাটিয়ে আনা মাছের পিসগুলি আর নিখুঁত থাকে না। মাছ ভাজার সময় কোন কোন বিষয়গুলি খেয়াল রাখলে কড়াইয়ে মাছ লেগে যাবে না?
১) মাছ ভাজার আগে মাছ থেকে ভাল করে জল ঝরিয়ে নিন। পারলে কিচেন টিসু দিয়ে মাছের গা একদম শুকনো করে মুছুন। কারণ মাছের গায়ে জল থাকা অবস্থায় তা কড়াইয়ের গরম তেলে দিলে, মাছ ভেঙে যাওয়া বা ছাল ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে। ২) কিচেন টিসু দিয়ে মাছ ভাল করে মোছার পর হলুদ, নুন ও লঙ্কাগুঁড়ো মাখিয়ে মাছ ভাজুন। ভাজতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাড়তে শুরু করবেন না। অন্তত মিনিট পাঁচেক এক ভাবে ভাজুন। কারণ মাছের গা একটু শক্ত না হওয়ার আগেই নাড়তে থাকলে কড়াইয়ে লেগে যাবে।
৩) মাছ ভাজার সময় খেয়াল রাখুন তেলটা ঠিক মতো গরম হয়েছে কি না। অনেকেই তেল ঠিক মতো গরম হওয়ার আগেই মাছ ছেড়ে দেন, তাতে মাছ লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৪) মাছ ভাজার সময় আঁচ মাঝারি করে ভাজুন। ভাল করে ভাজা হয়ে গেলে তবেই আর এক পিঠ উল্টোবেন, না হলে মাছ ভেঙে যাবে। ৫) খুব অল্প তেলে মাছ ভাজবেন না। মাছ ভাজার জন্য পর্যাপ্ত তেল ব্যবহার করুন, তা হলে মাছ কড়াইতে লেগে যাবে না।
যেভাবে মাছ ভাজলে মাছের তেল ছিটকে এসে লাগবে নাঃ খাবার টেবিলে যখন সুস্বাদু ভাজা মাছ পরিবেশন করা হয় তখন তা খেতে কতই না মজা লাগে। কিন্তু রান্নাঘরে এই মজাদার খাবারটি তৈরি করা যে কতটা কঠিন তা শুধু যে করে সেই জানে। প্রসেসটা সহজ হলেও এর থেকে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও থাকে অনেক। আজ তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো যে কি ধাপ বা কৌশল গ্রহন করে মাছ ভাজলে আর তেল ছিটে আসবে না।
ধাপ ১. প্রথমে মাছটি কেটে নিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ধাপ ২. ধোয়া হয়ে গেলে মাছগুলো তুলে অন্য একটি পাত্রে জল ঝরিয়ে নিয়ে নিতে হবে। যে পাত্র মাছ ধুতে ব্যবহার করেছেন, সে পাত্রে ধোয়ার পরে মাছ রাখবেন না। নতুন একটি পাত্র নিয়ে তাতে রাখবেন। ধাপ ৩. এবার মাছের টুকরো গুলোর মধ্যে একে একে সব উপাদান যেমন পরিমাণমতো লবণ, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে ম্যারিনেট করে একটা ঠান্ডা স্থানে রেখে দিন পনের থেকে বিশ মিনিটের মতো। এসময় চাইলে ফ্রিজের নর্মালেও রাখতে পারেন।
ধাপ ৪. ম্যারিনেট করা হয়ে গেলে ফ্রিজ থেকে বের করে নিন। এবার একটি ফ্রাই প্যান বা কড়াই চুলায় বসিয়ে দিন এবং ভালো করে গরম করে নিন। এসময় চুলার আঁচ মিডিয়াম টু হাই থাকবে। প্যানটি ভালো করে গরম হয়ে গেলে তাতে তেল ঢেলে দিন। খেয়াল রাখবেন মাছ ভাজার জন্য অনেক বেশি তেলের দরকার হয় না। কারন মাছ থেকেও এমনিতেই কিছুটা তেল ছাড়বে। তাই তেলটা পরিমাণ মতো দিতে হবে। তেল যদি অনেক বেশি হয়ে যায় তাহলেই কিন্তু তা ছিটে গায়ে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সুতরাং তেলটা বুঝে শুনে দিতে হবে।
ধাপ ৫. এরপর তেলটাকেও ভালো করে গরম করে নিতে হবে। ঠান্ডা তেলে কখনোই মাছ ছাড়তে যাবেন না। কারন যখনি আপনি ঠান্ডা তেলে মাছ ছাড়বেন সে মাছ কড়াইয়ের তলায় লেগে যাবে। মাছ ভাজা ভালো হবে না। তা পুড়ে যাবে। তাই তেল গরম করে নিবেন ভালো করে। ধাপ ৬. তেল গরম হয়ে গেলে একটা একটা করে মাছের টুকরাগুলো ছেড়ে দিন। অনেক উপর থেকে ভুলেও ছাড়বেন না। তাহলে তেল ছিটে আসবে। কড়াইয়ের খুব কাছে থেকে হালকা করে ছাড়বেন। দেখবেন তেল একটুও ছিটে আসবে না। আর তেলে মাছ ছাড়ার সময় চুলার আঁচ একেবারে লো করে দিবেন।
ধাপ ৭. মাছ ছাড়ার আগে তেলের মধ্যে ও চুলায় কিছুটা লবণ নিয়ে ছিটিয়ে দিন। তারপর মাছ ছেড়ে দিন। ধাপ ৮. মাছ ঢেকে ভাজতে যাবেন না। এতে ঢাকনায় জমে থাকা জল তেলে গিয়ে ছিটে আসবে। মাঝারি আঁচে একটু সময় নিয়ে একপাশ ভেজে নিবেন। একপাশ হয়ে গেলে খুন্তি দিয়ে আসতে করে উল্টে দিবেন। তাড়াহুড়া করে এই কাজটি করবেন না। তাহলেও কিন্তু তেলের ছিটা এসে লাগতে পারে। হালকা হাতে কাজটি করবেন। ধাপ ৯. দুই পাশ ভাজা হয়ে গেলে আস্তে করে একটি পাত্রে নামিয়ে নিন। চুলা বন্ধ করে দিন।
বিশেষ টিপসঃ যারা রান্নায় নতুন অর্থাৎ নতুন নতুন মাছ ভাজবেন তারা রান্না করার সময় এপ্রোন পড়ে নিতে কখনো ভুল করবেন না। সেই সাথে হাতে এক জোড়া গ্লাভস পড়ে নেবেন। পারলে চোখে চশমা পড়ে নিতে পারেন। একবার রান্না আপনার হাতে চলে আসলে দেখবেন এই সমস্যায় আর পড়তে হবে না। বিশেষ সর্তকতাঃ মাছ ভাজার জন্য যখন তেলে ছাড়বেন তখন অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে মাছে কোন জল না থাকে। যথা সম্ভব জল ঝেরে তেলে ছাড়তে হবে। তাহলে আর তেল ছিটে আসবে না।